শিরোনাম
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬:৩৯, ২ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৪১, ২ মে ২০২৫
নদী থেকে মাছ ধরে ফিরছেন জেলেরা। ছবি: সংগৃহীত
জানা গেছে, ছয়জন জেলে ৮ হাজার টাকা খরচ করে মাছ শিকারে যান। তাদের জালে একটি ইলিশও ধরা পড়েনি। পাঙাশের পোনা, পোয়া ও ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাত্র ৩ হাজার টাকার মাছ ধরা পড়েছে। এতে তাদেরকে ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে বলে জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার লুধুয়া মাছঘাটের জেলে মো. সবুজ মাঝি ও একই নৌকার ইউছুফ মাঝি আক্ষেপ করে কথাগুলো জানান।
লুধুয়া মাছঘাটে গিয়ে জেলেসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শেষ হয়েছে ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত। দিনের বেলায় নদীতে নেমে পড়ে জেলেরা। কিন্তু জালে মাছ ধরা পড়েনি। নদীতে ইলিশ নেই বললেই চলে। ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। তাও আকারে একেবারে ছোট। ঘাটে বেচাবিক্রির উৎসব, হাকডাক থাকার কথা থাকলেও দেখা গেছে পুরোই উল্টো চিত্র। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ ঘাটে মাত্র ৩টি ইলিশ আসে। তবে ছোট আকারের পোয়া, পাঙাশ ও ইলিশের পোনা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে, বড় মাছ ধরা না পড়ার পেছনে ছোট বা পোনা মাছ শিকারকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে অবাধে মাছ শিকার হয়েছে। শুরু থেকে এবারের অভিযান ছিলো পুরোই ঢিলেঢালা।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রায়পুরের উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের হাজিমারা বাজার এবং আলতাফ মাস্টার ইলিশ মাছ ঘাট এলাকায় জেলেদের কর্মচাঞ্চল্যতা দেখা গেছে। কেউ মাছ ধরার জন্য নদীতে যাচ্ছেন, কেউবা জাল ঠিকঠাক করছেন। কেউ কেউ ধরে আনা মাছ পাড়েই বিক্রি করছেন।
হাজিমারা বাজার এলাকার জেলে মাইনুদ্দিন মাঝি জানান, চারজন জেলেকে নিয়ে বুধবার রাত ১টায় নদীতে নামেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় মাছ ধরা শেষে পাড়ে এসেছেন। পেয়েছেন পোয়াসহ ছোট প্রজাতির মাছ। এসব মাছ বিক্রি করেছেন মাত্র সাত হাজার ৯০০ টাকায়।
একই এলাকার জেলে আজুব মাঝি বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোরে নদীতে নেমেছিলাম। উঠেছি দুপুর ২টার দিকে। ছোট আকারের কয়েকটি ইলিশ ও পোয়া মাছ পেয়েছি। এসব মাছ বিক্রি করে শুধু খরচই উঠবে।
আলতাফ মাস্টারঘাট এলাকার প্রবীণ জেলে মালেক মিয়া বলেন, “ভোরে নদীতে নেমে পাওয়া মাছ বিক্রি করেছি মাত্র দুই হাজার টাকায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নদীর জাটকাসহ ইলিশ সাগরের দিকে নেমে গেছে। তিনবার জাল ফেলে ছোট আকারের একটি ইলিশ পেয়েছি।”
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, “মেঘনা ও পদ্মার ইলিশ পরিভ্রমণশীল মাছ। সাগর থেকে নদীতে আসে, আবার সাগরে চলে যায়। সহসায় জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবে। শুধু ইলিশ নয়, নদীর সব ধরণের মাছই মূল্যবান ও জেলেরাও তা পাচ্ছেন।”
অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আব্দুর রব বলেন, “জেলেরা ছোট ছোট মাছের পোনা শিকার করে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করছে। জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলাকালেও জাটকা মাছ ধরেছে। ঘাটে যে পাঙাশ মাছের পোনাগুলো দেখা যাচ্ছে, এক কেজিতে ২০টির বেশি হবে। কিন্তু একেকটি পাঙাশের পোনা বড় হতে পারলে ৪ থেকে ৫ কেজি হতো। চাপিলা নামে যে মাছ শিকার করা হচ্ছে, এগুলো সব ইলিশের পোনা। জেলেরা ব্যাপকহারে পোয়া মাছের পোনা নিধন করছে। এগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পেলে নদীতে মাছের উৎপাদন বেড়ে যেত। ১০ বছর আগেও নদীতে ভরপুর মাছ ছিলো, এখন নেই।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, “নদীতে এখন পানি বেশি। আবহাওয়া কিছুটা খারাপ। তাই মাছ কম। তবে ২-৩ দিন পর মাছ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুই মাসে ২৭৬টি অভিযানে ৩২টি মামলায় ৯৪ জন জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।"
এ ছাড়া, দেড় টন মাছ, ২০ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ৬৪টি নৌকা জব্দ করা হয়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/এনএ