শিরোনাম
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭:২৪, ১২ জুলাই ২০২৫
ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আল ফারুক আহমেদ নতুন। তার বাড়ি জেলার পবা উপজেলার ভুগরইল এলাকায়। পেশায় তিনি একজন ঠিকাদার। তার মামা ওয়াসিমুল হকের বাড়িও ভুগরইল, তিনিও ঠিকাদার। দুজনে ২০১২ সাল থেকে একসঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে ঠিকাদারি কাজ করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন অভিযোগ করেন, এখনও তাদের পবা উপজেলার একাধিক রাস্তার কাজ চলমান আছে। এসব কাজ করতে গিয়ে মামার সঙ্গে তার আর্থিক লেনদেন করতে হয়েছে। অনেক সময় আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি মামাকে টাকা ধার দিয়েছেন। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি তার মামাকে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। এরমধ্যে ২০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন মামা। বাকি টাকা দিচ্ছেন না।
নতুন বলেন, ছয় কিস্তিতে তিনি সব টাকা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) মাধ্যমে মামাকে দিয়েছেন। এর ব্যাংক রিসিপ্ট কপি তার কাছে আছে। কিন্তু মামা টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এ ছাড়া ব্যবসার কোন লভ্যাংশও দিচ্ছেন না। পলাতক সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তার মামা, আওয়ামী সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে তার একটি জমিও দখলে নিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত ৪ মাস ধরে আমি মামার কাছে লভ্যাংশসহ পাওনা টাকা চেয়ে আসছি। কিন্তু তিনি নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে টাকা দিচ্ছেন না। পারিবারিকভাবে এবং আমাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের স্মরণাপন্ন হয়েও আমি কোন সমাধান পাইনি। তিনি আমার মামা বলে আমি আইনের আশ্রয়ও নিতে পারিনি। সম্প্রতি টাকা দেওয়ার নামে আমার মামা আমাকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। আমি সেখানে গেলে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করা হয়। আমার মামা ওয়াসিমুলের পক্ষ নিয়ে সেখানে আমার বড় মামা পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীনও মারধর করেন। আরেক মামা ওহাব আলী এবং তাদের ছেলে কাওছার আলী ও মো. লিটন আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করেন। এ সময় আমার কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’
এ ঘটনায় চিকিৎসার পর স্ত্রী তানিয়া খাতুন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে নতুন বলেন, ‘পলাতক মেয়র লিটন ও পলাতক এমপি আয়েন উদ্দিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আমার মামা আওয়ামী লীগের ডোনার ছিলেন। তার বিয়ের অনুষ্ঠানে এই দুজন পলাতক নেতা গিয়েছিলেন। সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়েছেন। দেশি-বিদেশি অস্ত্র দিয়ে ভাতিজা কাওছার ও লিটনের নেতৃত্বে প্রতিদিন গুন্ডাবাহিনী পাঠাতেন। এ জন্য বোয়ালিয়া থানায় করা একটি মামলার ২৬ নম্বর আসামি করা হয় আমার মামাকে। আমার বড় মামা জয়নাল আবেদীনও আরেকটি মামলার ৬১ নম্বর আসামি।’
এখন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে অভিযোগ করে নতুন আরো বলেন, ‘আমি এখন আশঙ্কা করছি, পাওনা ২ কোটি টাকা ও দখল করা জমি না দিতে আমার মামা আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন। আমাকে দুনিয়াছাড়া করতে পারলে টাকা দেওয়া লাগবে না, তিনি এমন ষড়যন্ত্রই করছেন। মামার কারণে আমি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। যে কোন মূহুর্তে তিনি আমার যে কোন ক্ষতি করতে পারেন। আমি আমার প্রাণহানিরও আশঙ্কা করি। এ ছাড়াও আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। আমার যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবেন আমার মামা ওয়াসিমুল হক ও জয়নাল আবেদীন।’
পুলিশ-প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রাণের নিরাপত্তা ও পাওনা টাকা উদ্ধার করতে আপনারা আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করবেন এবং আমাকে অন্যায়ভাবে তার চেম্বারে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধরের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমি সবার প্রতি অনুরোধ জানাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসিমুল হক বলেন, ‘নতুনের সব অভিযোগ মিথ্যা। সে আমার কাছে কোন টাকা পাবে না। আওয়ামী সরকারের আমলে ভাগনে নতুনই আমার কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা নিয়েছে। এখন টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। সে যুবলীগের নেতা। কিন্তু যুবদলের এক নেতার বোনকে বিয়ে করে বেপরোয়া হয়ে গেছে। পারিবারিকভাবে বসেছি, কিন্তু সে কারও কথা শোনে না। জোর করে টাকা নিতে চায়। এ জন্য সম্প্রতি আমার চেম্বারে হামলা করেছিল। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেছি।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে