শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:১৭, ২৭ জুন ২০২৫
ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের সময়ে সরকার সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলেও জনগণ রাস্তায় নামেনি, প্রতিবাদ করেনি। পেজেশকিয়ানের মতে, এটাই ইরানিদের মহানুভবতা। কিন্তু সমাজবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি সাঈদ মোইদফার সতর্ক করে দিয়েছেন, এই নীরবতা অস্থায়ী হতে পারে। তাঁর মতে, “যদি সরকার মানুষের সঙ্গে বাড়তে থাকা দূরত্ব ঘোচাতে উদ্যোগ না নেয়, তাহলে যুদ্ধের অবসানই পরিণত হবে নতুন সামাজিক অস্থিরতার সূচনায়।”
ইসলাম নয়, এখন ‘ইরান’ মুখ্য!
যুদ্ধবিরতির পর ইরানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাষায় এক আশ্চর্য রূপান্তর দেখা গেছে। রাষ্ট্রের ইসলামিক আদর্শিক চেতনা যেন ধীরে ধীরে পেছনে সরে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি পর্যন্ত তাঁর সাম্প্রতিক ভাষণে ‘ইসলামিক ইরান’ শব্দটি কেবল একবার ব্যবহার করেছেন, সেটিও প্রসঙ্গহীনভাবে।
এর বিপরীতে ‘ইরান’ এখন প্রতিটি শিরোনামের শুরুতে। ‘এতেমাদ’, ‘আরমান মেল্লি’র মতো প্রভাবশালী সংবাদপত্রগুলো তাদের প্রথম পাতায় জাতীয় সংহতির প্রশংসা করছে। জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পীদের মুখ।
তেহরান সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা এমনকি পরিবেশন করেছে ‘ও ইরান’ শিরোনামের একটি দেশাত্মবোধক সংগীত, সেটিও আজাদি মনুমেন্টের নিচে—যা এক প্রতীকী বার্তা বহন করে: ইরান আগে, মতাদর্শ পরে।
ঐক্যের পেছনে দায়বোধ ও রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস
সরকারের পক্ষ থেকে এই ঐক্যের বার্তার পেছনে একধরনের দায়বোধও কাজ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সংস্কারপন্থী সমাজবিজ্ঞানী হামিদ রেজা জালাইপুর বলেন, “যুদ্ধ শেষে সরকারের দায়িত্ব জনগণকে পুরস্কৃত করা—এটাই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি শক্তিশালী করতে পারে।”
এমনকি রক্ষণশীল মহলেও এই ধারণার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এক সাবেক সম্পাদক স্বীকার করেছেন, এখন সরকারের পালা—জনগণের সহনশীলতার প্রতিদান দেওয়ার।
সংসদও ইতিমধ্যে নতুন বাস্তবতায় খাপ খাওয়াতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। এটি যেমন একটি ‘বিপ্লবী অবস্থানের’ বার্তা, তেমনি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিতও।
আলোচনায় অনুপস্থিত একজন—আয়াতুল্লাহ খামেনি
তবে রাজনৈতিক আলোচনায় একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হলো—‘সরকার’ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও কেউই সরাসরি উল্লেখ করছেন না সেই ব্যক্তির নাম যিনি বাস্তবিক অর্থে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা: সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। তিনিই যুদ্ধের নির্দেশদাতা, তিনিই চূড়ান্ত নীতি নির্ধারক। তাঁর উপস্থিতি থেকেও অনুপস্থিতি যেন এই নতুন ঐক্য প্রচারণাকে আরেকটু রহস্যময় করে তুলেছে।
এই মুহূর্তে ইরানের শাসকগোষ্ঠী জাতীয়তাবাদ, ঐক্য এবং সংস্কৃতির ভাষা ব্যবহার করে দেশকে একত্রে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু অনেকের প্রশ্ন—এই নতুন ছাঁচ কি সত্যিই টিকে থাকবে? না কি এটি সাময়িক একটি কৌশল, যা খুব শিগগিরই ভেঙে পড়বে প্রবল সামাজিক চাপের মুখে?
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের শেষে যদি জনসাধারণের ক্ষোভ ও প্রত্যাশার প্রতি রাষ্ট্র যথাযথভাবে সাড়া না দেয়, তবে ‘ঐক্যের উৎসব’ শিগগিরই রূপ নিতে পারে একটি ‘অসহমত বিস্ফোরণে’।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ