শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:৫৬, ৩০ জুন ২০২৫
ফজর আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ—গত বৃহস্পতিবার রাতে এক নারীর ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন তিনি। পরে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়লে তাঁকে মারধর করা হয়, এমনকি সেই নারীকেও বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। এই ভয়াবহ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে—একটি ধর্ষণের, অপরটি ভিডিও ধারণ ও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায়। পুলিশ ইতিমধ্যে ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। ঘটনার পরপরই শুরু হয় ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় ঘিরে চরম বিভ্রান্তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ছবি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফজর আলী নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক বলেই পরিচয় দিতেন এবং দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকতেন। এরপর থেকে তিনি বিএনপির কর্মসূচিতে যেতে শুরু করেন। গেলো ডিসেম্বরে বিএনপির এক অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতির ছবিও ছড়িয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফজর আলীর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি একজন ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং মূলত আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে ছিলেন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও তাঁর সঙ্গে দলের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করা হচ্ছে।
ফজর আলী সম্পর্কে স্থানীয়দের অভিযোগ গুরুতর। তাঁকে ‘সুবিধাবাদী’ ও ‘মাদক কারবারি’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন অনেকে। জুয়ার আসর বসানো, সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে দেওয়া এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে।
এক সাবেক ইউপি সদস্য বলেন, “ফজর আলীর কাজই হলো রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ব্যবহার করে অপকর্ম করা। সে যখন যেটা দরকার, সেই দলের নাম ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করে।”
মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম কামরুজ্জামান স্পষ্ট করে বলেন, “আমাদের কাছে অপরাধী শুধু অপরাধী। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় অনুসন্ধানের প্রয়োজন নেই। এসব টানাহেঁচড়া করে রাজনৈতিক দলগুলো অপরাধীদেরই সুবিধা করে দেয়।” তিনি আরও জানান, ধর্ষণের পাশাপাশি নির্যাতন ও ভিডিও ছড়ানোয় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
কুমিল্লা সনাক সভাপতি অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র রায় বলেন, “প্রতিবারই এমন ঘটনার পর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এটি নোংরা রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ।”
নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন বলেন, “এই ধরনের নির্মম ঘটনার পরও যখন দলগুলো দোষ চাপানোর রাজনীতি করে, তখনই অপরাধীরা সুযোগ নেয়। আমাদের উচিত অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে তাকে রক্ষা নয়, বরং সামাজিকভাবে বয়কট করা।”
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ