শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:৩৩, ২ জুলাই ২০২৫
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব কোম্পানি শুধু দখলদার ইসরায়েলি নীতিকে সমর্থন করছে না, বরং তারা ‘গণহত্যার অর্থনীতি’র অংশ হয়ে উঠেছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে পূর্বে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা আলবানিজ এবার দখলদার অর্থনীতির নেপথ্যে থাকা করপোরেট গঠনতন্ত্রকে তুলে ধরেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মাইক্রোসফট, গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট, অ্যামাজন এবং আইবিএম—এদের প্রযুক্তি ও ক্লাউড সেবা ইসরায়েলকে বায়োমেট্রিক নজরদারি, তথ্য বিশ্লেষণ এবং সামরিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করছে। ইসরায়েলের যুদ্ধযন্ত্রের অন্যতম বড় সরবরাহকারী লকহিড মার্টিন, লিওনার্দো এসপিএ এবং জাপানি কোম্পানি FANUC অস্ত্র ও সামরিক যন্ত্রাংশ সরবরাহে যুক্ত।
এছাড়া, পালানটির টেকনোলজিস নামের একটি মার্কিন সফটওয়্যার কোম্পানি গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক লক্ষ্যবস্তুর তালিকা তৈরিতে অংশ নিয়েছে, যেখানে ‘ল্যাভেন্ডার’, ‘গসপেল’ ও ‘হোয়্যার ইজ ড্যাডি’ নামের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।
বেসামরিক প্রযুক্তির দ্বৈত ব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে ক্যাটারপিলার, হুন্দাই, ভলভো ও রাডা ইলেকট্রনিকসের মতো কোম্পানির নাম, যারা ঘরবাড়ি ধ্বংস ও অবৈধ বসতি নির্মাণে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে।
পর্যটন খাতেও এই দখলদারতাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বুকিং ডট কম ও এয়ারবিএনবি প্ল্যাটফর্মগুলো পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতিতে অবস্থিত ঘর ও হোটেল ভাড়া দিয়ে মুনাফা করেছে।
অর্থায়নের ক্ষেত্রে জ্বালানি ও খনিজ পণ্যের জোগানদাতা ড্রামন্ড ও গ্লেনকোর, কৃষিখাতে চীনা কোম্পানি ব্রাইট ডেইরি ও নেটাফিম ইসরায়েলের অবকাঠামোগত ও খাদ্য চেইনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সংস্থা বার্কলেস ও BNP পারিবাস ইসরায়েলের ঋণ খাতে সমর্থন জুগিয়েছে, যা যুদ্ধকালীন অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বের দুই বৃহৎ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরক ও ভ্যানগার্ডকে ইসরায়েলের পক্ষে এই করপোরেট কাঠামো গঠনের অন্যতম অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্ল্যাকরক এবং ভ্যানগার্ডের বিনিয়োগ নীতিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ইসরায়েলের দখলদারতাকে ‘ঔপনিবেশিক বর্ণবাদী পুঁজিবাদের দৃষ্টান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধাপরাধে অংশীদার হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক অপরাধে দায়ী হতে পারেন বলেও সতর্ক করা হয়।
২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এক পরামর্শমূলক রায়ে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি দখলদারতাকে ‘অবৈধ’ ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করে জাতিসংঘ বলেছে, এই দখলদার অর্থনীতি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানিয়েছে—ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক ছিন্ন করতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক জগতের জন্য একটি বড় নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। মানবাধিকার ও ব্যবসায়িক স্বার্থের দ্বন্দ্ব এখন আন্তর্জাতিক ফোরামে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ