ঢাকা, রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থ ছাড়ে অনিশ্চয়তা 

২ হাজার কোটি টাকার বিল দিচ্ছে না চীনের এক্সিম ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:৫৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১২:২৫, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

২ হাজার কোটি টাকার বিল দিচ্ছে না চীনের এক্সিম ব্যাংক

ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হলেও অর্থ ছাড়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে প্রকল্পটি। প্রকল্পে অর্থায়নকারী চীনের এক্সিম ব্যাংক প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বিল আটকে রেখেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এক্সিম ব্যাংক ঋণের অর্থ ছাড় না করায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা বিল পায়নি। অর্থ ছাড়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে তাগিদ দিলেও এখনো সমাধান হয়নি।

সর্বশেষ ৭ এপ্রিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্টের (সিএসসি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ব্যাংকটিকে চিঠি পাঠিয়ে অর্থ ছাড় না করার কারণ জানতে চাওয়া হবে এবং ২৪ অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প পরিদর্শন প্রতিবেদন পাঠানোর অনুরোধ করা হবে।

এদিকে, প্রকল্পের ঋণের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত। এই সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ না হলে প্রকল্পে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বাকি কাজ শেষ করবে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালে ভাঙ্গা জংশনের কিছু অতিরিক্ত কাজের কারণে অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ৭৮ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়। এ কারণেই এক্সিম ব্যাংক অর্থ ছাড়ে অনীহা দেখাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের সর্বশেষ (মার্চ ২০২৫) অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৭.৩০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮.৮০ শতাংশ। বর্তমানে কমলাপুরে টিটিপাড়া আন্ডারপাস (৭৫% সম্পন্ন), ভাঙ্গা জংশন (৯০%) এবং সেন্ট্রাল ট্রাফিক কন্ট্রোল (CTC) সিস্টেমের (৯২%) কাজ চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। ট্রেনও চালু হয়েছে। এখন অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান টাকা না দিলে মূল সমস্যায় পড়বে ঠিকাদার। আমরা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিছু অর্থ ছাড়ের আশ্বাস পেয়েছি।’

তিনি জানান, প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে অবশিষ্ট কাজ শেষ করবে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের সমস্যা হবে না।

২০২৩ সালে আংশিকভাবে চালু হওয়ার পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পুরোপুরি ঢাকা-যশোর রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়া যাচ্ছে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায়। এই রুট দিয়ে প্রতিদিন ৪৮টি ট্রেন চালানোর সক্ষমতা থাকলেও এখন চলছে ১০টি যাত্রীবাহী ট্রেন।

প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। পরে দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা কমে দাঁড়ায় ৩৮ হাজার ৬২৪ কোটি টাকায়। চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী আরও ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

এ প্রকল্পের অধীনে অর্থায়নের প্রায় ২৩ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। বাকি ব্যয় সরকার রাজস্ব খাত থেকে মেটাচ্ছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘চুক্তির শর্ত ভেঙে গেলে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান কিস্তি আটকে দিতে পারে। তাই আর্থিক চুক্তির ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা দরকার। কারণ ঋণের টাকার সাথে সুদও পরিশোধ করতে হয়।’
 

আরও পড়ুন