ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

নির্বাচনে জয়লাভের পর ঋণখেলাপি হলেও বাতিল হবে সংসদ সদস্য পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:৫১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ০৯:৫৫, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

নির্বাচনে জয়লাভের পর ঋণখেলাপি হলেও বাতিল হবে সংসদ সদস্য পদ

নির্বাচনে জয়লাভের পরেও কোনো সংসদ সদস্য ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও এই বিষয়টি সংবিধানে উল্লেখ আছে, তবে এর প্রয়োগের কোনো দৃষ্টান্ত নেই।

ইসির ধারণা, এই বিধানটি আরপিওতে যুক্ত হলে কমিশন নিজ উদ্যোগে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই উদ্দেশ্যে কমিশন আরপিও সংশোধন করে এই বিধানটি যুক্ত করার প্রস্তাব করবে। ইসির মতে, নির্বাচনের পর অনেক সংসদ সদস্য ঋণখেলাপি হয়ে পড়েন। এই বিধানটি থাকলে সংশ্লিষ্ট সদস্যরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। তাঁদেরকে সতর্ক করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কমিশন মনে করে, ঋণখেলাপির প্রবণতা রোধ এবং এতে বাধা সৃষ্টি করতে এই বিধানটি সংযোজন করা জরুরি। 

ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির প্রধান এবং নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিষয়টি সংবিধানে আগে থেকেই বিদ্যমান। আরপিওতে এটি যুক্ত করার বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। 

তিনি স্পষ্ট করেন, ‘যদি কেউ ঋণখেলাপি প্রমাণিত হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। যদিও আইনে সরাসরি এটি উল্লেখ নেই, তবে পরিস্থিতি তেমনই দাঁড়াবে অথবা জরিমানা করা হবে। তাঁরা আশা করছেন, এই বিধানটি যুক্ত হলে চিঠি পাওয়ার আগেই খেলাপি ঋণ পরিশোধ করা হবে। কমিশন অন্তত ৩০০ জন সংসদ সদস্যকে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে মুক্ত রাখতে আগ্রহী।

জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের ২৩ জানুয়ারি সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০০ জনই ছিলেন ব্যবসায়ী। একাদশ সংসদে এই সংখ্যা ছিল ১৮৫। 

এদিকে কমিশনের সূত্র জানাচ্ছে, ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা স্বাভাবিক, তবে খেলাপি হলে সমস্যা। নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্যরা যাতে ঋণখেলাপি না হন, সেই জন্য এই বিধানটি যুক্ত করে তাঁদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে চায় ইসি।

ইসির সূত্র আরও জানায়, কেবল সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের যে অবিশ্বাস রয়েছে, বর্তমান ইসি সেটিও দূর করতে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যে আরপিওর অনুচ্ছেদ ১২-এর দফা ৭-এর (ক)-তে বিষয়টি সংযোজনের প্রস্তাব করা হবে। প্রস্তাবে উল্লেখ করা হবে যে, এই আদেশ অথবা অন্য কোনো বলবৎ আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনের পরেও যদি এমন কোনো অযোগ্যতার অধীনে পড়েন যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলে নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে অবগত হয়ে সেই বিরোধের শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে পারবে এবং এই ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়টি সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ এবং আরপিওর ১২ ধারায় উল্লেখ আছে। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনের আগে কেউ ঋণগ্রহীতা না হলে তাঁকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 

এছাড়া সংবিধান অনুযায়ী, ঋণখেলাপি সহ প্রার্থীদের অন্যান্য অযোগ্যতা নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে সংসদ সেটি বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য ইসির কাছে পাঠাবে। ইসি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে ফলাফল দেবে, সেটাই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। সংবিধানে আরও বলা হয়েছে যে, ইসিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনে এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। তবে স্বাধীনতার পর সংসদ থেকে এমন একটি বিষয়ও পর্যালোচনার জন্য ইসিতে পাঠানো হয়নি এবং সংবিধানের ১২২-এর ৫ ধারা অনুযায়ী এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইনও তৈরি করা হয়নি।

এদিকে ইসির সূত্র জানাচ্ছে, আরপিওর ১২ ধারায় এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে, কোনো সংসদ সদস্যের ঋণখেলাপি থাকার খবর পেলে ইসি তা আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারবে। তদন্তে যদি সেই সদস্য ঋণখেলাপি প্রমাণিত হন, তাহলে কমিশন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে।
 

আরও পড়ুন