ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মুহররম ১৪৪৭

ইউএনএফপিএর জরিপ

পেশা, ব্যক্তি স্বার্থ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় কমছে প্রজনন হার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১:২৬, ১৪ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ২১:২৭, ১৪ জুলাই ২০২৫

পেশা, ব্যক্তি স্বার্থ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় কমছে প্রজনন হার

ছবি: সংগৃহীত

পেশা, অর্থনৈতিক অচলবস্থা, ব্যক্তি স্বার্থ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতার অভাবসহ নানা কারণে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ কমছে। সম্প্রতি ১৪টি দেশের ১৪ হাজার তরুণের মাঝে পরিচালিত এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। জরিপ করেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ এবং ইউ গভ সার্ভে।

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে সোমবার (১৪ জুলাই) পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এ তথ্য জানানো হয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যপী জনসংখ্যা ৮ বিলিয়নের নিচে নেমে আসাও সমস্যা নয়। প্রকৃত সমস্যা হলো প্রজনন হারে প্রভাব পড়া। এর ফলে বিশ্বের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী সন্তান ধারণের সুযোগ অথবা আকাঙ্ক্ষা হতে বঞ্চিত হবে।

জরিপে দেখা গেছে, একাধিক সন্তান গ্রহণের ইচ্ছা বা প্রত্যাশা থাকলেও তা বাস্তবে রূপ পায় না। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে; কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার অনিশ্চিয়তা, জীবনযাত্রায় উচ্চ ব্যয়ের কারণে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি তরুণ পছন্দের সংখ্যা অনুযায়ী সন্তান গ্রহণ করতে সক্ষম হয় না।

প্রতি চারজনে একজন পছন্দ মতো সময়ে সন্তান নিতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এদের ৪০ শতাংশ পরবর্তীতে সন্তান ধারণের প্রত্যাশাকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ১৩ শতাংশ তরুণের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং একটি সময় যখন তার সন্তান চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। ১৪ শতাংশ তরুণ উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবে সন্তান গ্রহণে সমর্থ হয় না। ১৮ শতাংশ জনগণ পরিবার পরিকল্পনা অথবা প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত হলো অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন।

আর্থিকভাবে সক্ষম হলে ক্ষমতায়নের পথ সহজ হয়। একটি সম্ভাবনাময়, ন্যায্য বিশ্ব গড়তে হলে আমাদের সমতা অর্জন করতে হবে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে যত বাধা আছে, তা আমাদের ঝেড়ে ফেলতে হবে।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা পছন্দের পরিবার গড়ার জন্য তারুণ্যের ক্ষমতায়নের কথা বলছি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা, সহায়ক পরিবেশ এবং সচেতনতা। তরুণদের উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করতে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র বিনির্মাণে তরুণ সমাজের ভূমিকা কী হতে পারে, তা জাতি দেখেছে। তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং রোবটিকসের উন্নতি হচ্ছে, তার প্রভাব পড়বে জীবনের নানা ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানেও। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, বিশ্বে আজকে জনসংখ্যা হলো ৮২৩ কোটি ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৭৫০ জন। সর্বশেষ পাঁচ মিনিটে বিশ্বে ১ হাজার ২৫০ জন মানুষের জন্ম হয়েছে এবং এক হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ধারণা করা হয়, এ সংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাবে ২০৫৬ সালে। ১ হাজার ৯০ কোটিতে পৌঁছাবে ২০৯৮ সালে। এর পর থেকে এ সংখ্যা কমবে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইলে ৩ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে এবং প্রতি ৫০০ বর্গমাইলে একটি করে মেডিক্যাল কলেজ আছে। এটিও বিশ্বে রেকর্ড। এত ঘনবসতিপূর্ণ মানুষ ও এত মেডিক্যাল কলেজ পৃথিবীর কোথাও নেই।’

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

আরও পড়ুন