শিরোনাম
স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৩৪, ১২ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৩:০১, ১২ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
প্রি-ডায়াবেটিস কী?
প্রি-ডায়াবেটিস হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কিন্তু তা টাইপ-২ ডায়াবেটিস নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। এই অবস্থায় রক্তে সুগারের মাত্রা ৫.৭% থেকে ৬.৪% হেমোগ্লোবিন এ১সি (HbA1c) স্কোরে পরিমাপযোগ্য।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ‘ডায়াবেটিস ইউকে’-এর সিনিয়র ক্লিনিক্যাল অ্যাডভাইজার এস্থার ওয়ালডেন বলেন, “সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তনে
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ‘ডায়াবেটিস ইউকে’-এর সিনিয়র ক্লিনিক্যাল অ্যাডভাইজার এস্থার ওয়ালডেন বলেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব। এমনকি কেউ যদি প্রি-ডায়াবেটিস পর্যায়ে থাকেন, সেখান থেকেও পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেন।
প্রি-ডায়াবেটিস কীভাবে শনাক্ত করবেন?
অনেক সময়ই প্রি-ডায়াবেটিসের কোনো সুস্পষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না। ফলে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহ্যামের নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অ্যামান্ডা অ্যাভেরি বলেন, বেশিরভাগ মানুষ রুটিন হেলথ চেকআপে রক্তে সুগার লেভেল বাড়া দেখে প্রথম বুঝতে পারেন যে তারা প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থায় রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স, বডি ফ্যাট, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষত পেটের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি থাকলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ
অধ্যাপক রয় টেইলর, ‘লাইফ উইদাউট ডায়াবেটিস’ বইয়ের লেখক, ২০১১ সালে তার গবেষণায় দেখান, বর্তমান শরীরের ওজনের মাত্র ১০ শতাংশ কমালেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব, কারণ এতে লিভারে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমে আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রি-ডায়াবেটিস প্রতিরোধে নিচের চারটি কৌশল সবচেয়ে কার্যকর।
১. দেহের ওজন ১০ শতাংশ হ্রাস: ওজন বেশি হলে, তা কমিয়ে আনার মাধ্যমে প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দ্রুত ওজন কমানো (যেমন দিনে মাত্র ৮০০ ক্যালরি ইনটেক) পদ্ধতি টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
তবে সতর্কতা: এ ধরনের ক্যালরি নিয়ন্ত্রিত ডায়েট শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
২. ওজন কমিয়ে তা ধরে রাখা: দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব হলেও তা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখা কঠিন। এজন্য এমন ডায়েট বেছে নিতে হবে, যা সহজে অনুসরণযোগ্য। উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য, কম কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি কার্যকর।
‘ডায়াবেটিস ইউকে’-এর মতে, নিরামিষ, ভিগান বা লো-কার্ব ডায়েট টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।
৩. যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত: চিনি ও সুগারযুক্ত পানীয়: শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায় এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ায়।
রেড মিট ও প্রসেসড মাংস: অতিরিক্ত গ্রহণ করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে—এটি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট: হোয়াইট ব্রেড, পেস্ট্রি ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ে প্রচুর স্টার্চ থাকে, যা রক্তে সুগার বাড়িয়ে দেয়।
আলু ও উচ্চ জিআই খাবার: বিশেষত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. যে খাবারগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে: সবজি ও ফল: মূলজাতীয় ও সবুজ শাকসবজি এবং ব্লুবেরি, আঙ্গুর, আপেল জাতীয় ফল টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
গোটা শস্য (whole grains): প্রতিদিন ৪৫ গ্রাম গোটা শস্য টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২০ শতাংশ কমাতে পারে।
দুধ ও দই: প্রতিদিন কম ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১০-১৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
চা ও কফি (অসুগারযুক্ত): নিয়মিত কফি ও চা পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে— এটি প্রমাণিত একাধিক গবেষণায়।
আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি
আপনার যদি প্রি-ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং এটা একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে আপনি নিজের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারেন।
ডা. অ্যামান্ডা অ্যাভেরি বলেন, ডায়েটের ছোট ছোট পরিবর্তনও বড় ফল আনতে পারে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, তবে সময়মতো পদক্ষেপ নিলে ফলাফল অত্যন্ত ইতিবাচক হতে পারে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/এফএন/আরইউ