ঢাকা, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৬ মুহররম ১৪৪৭

আলোচনার আড়ালে কী যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১:৪৮, ১৮ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১১:৪৯, ১৮ জুলাই ২০২৫

আলোচনার আড়ালে কী যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে?

ছবি: সংগৃহীত

পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র- ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য সংলাপকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে। ইরানের এক উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে বলেছেন, ওয়াশিংটন শান্তির নামে আলোচনার কথা বললেও, প্রকৃতপক্ষে সেটি যুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া আর কিছু নয়। খবর: ইরান ইন্টারন্যাশনাল

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি ওই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ‘আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার আড়ালে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, আলোচনায় সময় নষ্ট না করে যুদ্ধের প্রস্তুতির দিকেই নজর দেওয়া উচিত।’

তার ভাষায়, ‘আমরা মনে করি, আলোচনার লক্ষ্য আসলে ইরানকে নিরস্ত্র করা, যাতে আসন্ন যুদ্ধে ইসরায়েলের দুর্বলতা ঢেকে রাখা যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘যেকোনো নতুন আলোচনার আগে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে—এটি যেন কোনো নিরাপত্তা-প্রতারণার ছল না হয়। এজন্য দরকার কঠিন এবং বাস্তবমুখী গ্যারান্টি।’

এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বলেন, গত মাসের মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এমনভাবে ধ্বংস হয়েছে, যা আর আগের অবস্থায় ফিরবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের তাড়া নেই।‘

অন্যদিকে ইরানি কর্মকর্তা প্রেস টিভিকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি আলোচনার নতুন কোনো উদ্যোগ আসে, তাহলে তা অবশ্যই ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র এবং সাম্প্রতিক সংঘাতের ক্ষতিপূরণ ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করেই শুরু করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিশ্চয়তা চাই যে, স্টিভ উইটকফ শান্তিপূর্ণ সমাধানের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আসছেন, যুদ্ধ উসকে দেওয়ার জন্য নয়। যদিও এ ধরনের গ্যারান্টি পাওয়া কঠিন, তবুও আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি সুযোগ দিতে রাজি আছি। আমরা তাদের বক্তব্য শুনব এবং দেখব তারা বাস্তবে কী করে।

উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর আগে তেহরানের সঙ্গে পাঁচ দফা বৈঠকে অংশ নেন। কিন্তু আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই ইসরায়েল ৬০ দিনের সময়সীমা শেষে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে।

১২ দিনব্যাপী সেই যুদ্ধে ইসরায়েলি বিমান ও ড্রোন হামলায় শতাধিক ইরানি নিহত হন, যাদের মধ্যে সাধারণ মানুষ, সেনাসদস্য এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীরাও ছিলেন। এর জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ২৭ জন ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করে।

এরপর ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় এবং ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায়—ইসফাহান, নাটাঞ্জ ও ফরদো—দীর্ঘপাল্লার বোমারু বিমান ও সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

২৪ জুন তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েল অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছায়।

সব মিলিয়ে এই সংঘর্ষ-সংলাপের আবহে তেহরান এখন স্পষ্টভাবে বলছে—কেবল কথা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর ও স্পষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চায় তারা। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শঙ্কা আবারও তীব্র হয়ে উঠছে।

ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে

আরও পড়ুন