শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৪৬, ২০ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানে মৌসুমের এক মাস আগেই জুলাই থেকে শুরু হয়েছে অস্বাভাবিক বৃষ্টি। দেশটিতে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির তীব্রতা বিগত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। অস্বাভাবিকভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় এরই মধ্যে ১৮০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ডন। আগামী দিনগুলোতে আরো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে এনডিএমএ।
এ অবস্থায় বিভিন্ন প্রদেশে জারি করা হয়েছে বন্যার সতর্কতা। এ ছাড়া তীব্র বৃষ্টিপাতের সময় নাগরিকদের ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতজনিত এই দুর্যোগের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও হিমবাহ গলনের গতি বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন এনডিএমএ চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইনাম হায়দার মালিক। তিনি বলেন, এই বছরের অস্বাভাবিক তীব্র বর্ষা মৌসুম যা স্বাভাবিকের চেয়ে এক মাস আগে জুলাই মাসে শুরু হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত তীব্র হয়েছে।
পিটিভি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী, পিডিএমএ ও এনজিওসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ব্যাপক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর (পিএমডি) শনিবার সিন্ধুতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরো বৃষ্টিপাত, বাতাস ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। করাচি, হায়দ্রাবাদ, সুক্কুর, থাত্তা, বাদিন, লারকানা, জ্যাকোবাবাদ, নবাবশাহ, মিরপুরখাস এবং অন্যান্য শহর ও জেলায় এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সিন্ধুর নিম্নাঞ্চলে বন্যার সতর্কতা জারি করেছে এনডিএমএ। তীব্র বৃষ্টিপাতের সময় নাগরিকদের ঘরের ভেতরে থাকার এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাঞ্জাবের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আজ রবিবার থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ মৌসুমী বৃষ্টিপাত সম্পর্কে একটি সতর্কতা জারি করেছে। আজ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পাঞ্জাবের বেশিরভাগ জেলায় তীব্র বাতাস, ধুলোবালি ও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
রাওয়ালপিন্ডি, মুরি, গালিয়াত, অ্যাটক, চকওয়াল, মান্ডি বাহাউদ্দিন, হাফিজাবাদ, গুজরাট, ঝিলামও গুজরানওয়ালায় প্রবল বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লাহোর, ফয়সালাবাদ, শিয়ালকোট, নারোওয়াল, টোবা টেক সিং, ঝাং, সারগোধা, মিয়ানওয়ালি, মুলতান, ডেরা গাজি খান, বাহাওয়ালপুর ও বাহাওয়ালনগরে গত বুধবার থেকে আগামী বুধবার জুলাই পর্যন্ত ব্যাপক বৃষ্টির আভাস রয়েছে।
পাঞ্জাবের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রদেশজুড়ে সব প্রধান নদী এবং সংশ্লিষ্ট নদীগুলোর জন্য উচ্চ-স্তরের বন্যার পূর্বাভাস জারি করেছে। মঙ্গলবার থেকে সম্ভাব্য বন্যার সতর্কতা জারি করেছে।
বন্যা পূর্বাভাস বিভাগের মতে, চেনাব, ঝিলাম, রবি, শতদ্রু এবং সিন্ধু নদী, তাদের উপনদী এবং নিম্নাঞ্চলে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ঝুঁকি তৈরি করবে।
এদিকে খাইবার পাখতুনখোয়ায় মৌসুমী পানিপ্রবাহ ও হিমবাহ গলে আকস্মিক বন্যার গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কাবুল, সোয়াত, পাঞ্জকোরা, বারা ও কালপানি নালায়। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পাহাড়ি ও পার্বত্য অঞ্চলে পরিবহনে সম্ভাব্য ব্যাঘাতের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ইসলামাবাদ ও মধ্য পাঞ্জাবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের ফলে পানিস্তর বেড়ে যাওয়ায় রাওয়াল বাঁধটি তার পূর্ণ ধারণক্ষমতা এক হাজার ৭৪৮ ফুটে পৌঁছেছে। কর্তৃপক্ষ রবিবার সকাল ৬টায় এর স্পিলওয়েগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যাতে পানির স্তর এক হাজার ৭৪৬ ফুটে নামিয়ে আনা যায়। আশেপাশের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ