ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫

৪ ভাদ্র ১৪৩২, ২৪ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম

Scroll
জুলাই সনদের কিছু দফায় বিএনপির আপত্তি, জানালেন সালাহউদ্দিন আহমদ
Scroll
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে চার মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে ইইউ: মাইকেল মিলার
Scroll
সচিবালয়ের সামনে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের অবস্থান, আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
Scroll
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, তারপর আমরা বিদায় নেব: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
Scroll
জুলাইয়ে ৪৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৮ জন নিহত: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন
Scroll
সাত জেলায় ঝড়ের আভাস, কমবে ঢাকার তাপমাত্রা
Scroll
বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুল ইসলামের ভিডিও ভাইরাল, তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক
Scroll
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক আয়োজনে উদ্যোগী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
Scroll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬২ হাজার ছাড়ালো
Scroll
যুক্তরাষ্ট্রে ছয় হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল
Scroll
বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে ফিরছেন নেইমার, বাদ পড়ছেন ভিনিসিয়ুস
Scroll
আজ চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জহির রায়হানের ৯১তম জন্মবার্ষিকী
Scroll
‘থ্রি ইডিয়টস’র অধ্যাপক অভিনেতা অচ্যুত পোতদার আর নেই

মহর্ষি মনোমোহন দত্ত বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের অনিবার্য সম্পদ

রফিক সুলায়মান

প্রকাশ: ১১:৫৪, ৩ মে ২০২৫

মহর্ষি মনোমোহন দত্ত বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের অনিবার্য সম্পদ

ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস

বাঙালি ভাববাদী সাহিত্য রচয়িতাগণের মধ্যে তিনি অন্যতম। মাত্র ৩১ কি ৩২ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে রচনা করেছেন কয়েক শত ভাব ও ভক্তিসঙ্গীত। তার রচিত বাণীগুলো নিবিড় ও গভীর অভিনিবেশ সহযোগে পাঠ করলে যে কোনো পাঠকই বিস্মিত হতে বাধ্য হবেন। তিনি সর্বধর্ম সম্মিলনীর পুরোধাপুরুষ। মহর্ষি মনোমোহন দত্ত (১৮৭৭-১৯০৯) এক গানে লিখেছেন— ‘কোরান পুরান আদি বাইবেল কি বেদ/সবে ফুকারিয়া কয় তারা অবিচ্ছেদ।’ তিনি বলেছেন, সকল ধর্মের মর্মবাণী আসলে এক ও অভিন্ন। প্রয়াণের শতবর্ষ পরেও তিনি উজ্জ্বল, জ্যোতির্ময় এবং ভক্তকূলের ভালোবাসায় সিঞ্চিত। তার রচিত বাণীসমূহ আজ অক্ষয়।

তার প্রয়াণের এক যুগ পর নজরুলের অভ্যূদয় ‘বিদ্রোহী’ নিয়ে। উপরে আমি যে চরণটি উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহার করেছি তেমনি একটি চরণ নজরুলের গানেও আছে— ‘খোদার মসজিদ মূরত মন্দির ঈসায়ী দেউল এহুদখানায়।’ তার অমর গীতিকা সিরিজ ‘মলয়া’ প্রথম খণ্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড আমি সংগ্রহ করেছি। গানের পাশে কিছু নোটসও নিয়েছি। তার বাণীর বৈভব এবং কালোত্তীর্ণ পঙক্তিমালা আমাকে প্রতি মুহূর্ত ভাবিয়ে তুলেছে। এমন মানবিক এবং ঐশ্বর্যপূর্ণ বাণীগুলো বাংলা সাহিত্যের বিদগ্ধ পণ্ডিতগণ যুগ যুগ ধরে উপেক্ষা করে গেছেন বলেই আমি অনুমান করি। ড. শহীদুল্লাহ, জসীম উদ্দিন, আকবর আলি খানের কোনো নিবন্ধ আমি পাইনি মহর্ষিকে নিয়ে। তার দর্শন নিয়ে কথা বলেননি অধ্যাপক আবদুল মতিন বা আনিসুজ্জামান। তার বিশ্বাস এবং আশ্রম-দর্শন নিয়ে লিখেননি কোনো খ্যাতিমান স্কলার। – এ বড় যন্ত্রণার কথা!

‘মলয়া গান’ নিয়ে আমি কথা বলেছি শিল্পী করিম হাসান খান, অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, শ্রীমতী কল্যাণী গুহ দত্ত, সাংবাদিক আব্বাসউদ্দিন হেলাল প্রমুখের সঙ্গে। এ ছাড়া বক্তব্য শুনেছি অনেকের। সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাসীমা (মহর্ষি মনোমোহন দত্তের চতুর্থ পুরুষ স্বরূপ দত্ত দয়ালমণীর জননী) আমার আঁধার অন্তরে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন ‘মলয়া’ প্রসঙ্গে। ভক্তকূল বিশ্বাস করেন যে মহর্ষি রচিত প্রত্যেকটি গানই ঐশীবাণী। এর নামকরণ তিনি নিজেই করেছেন। সঙ্গীত গুণাকর ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁসাহেব বাণীগুলোতে সুর বসিয়েছেন এবং প্রচার করেছেন। একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। মলয়া গান শতভাগ উত্তর ভারতীয় রাগনির্ভর, তাই এর গায়নশৈলী অন্যান্য ফকিরী বা ভাববাদী গান থেকে আলাদা। কয়েকটি গানের উল্লেখ করছি— ‘যার মন উদাসী হয়েছে পাগলারে/হিন্দু মুসলমান কে কয় চিনি না তারে’ (খাম্বাজ, একতালে), ‘ভাবান্তরে কেন ভাবাও/জাগিয়ে ঘুমিয়ে থাক ফিরে নাহি চাও’ (নটনারায়ণ, ধামাল), ‘যার সনে যার মন বাঁধা নয়ন বাঁধা যার রূপে’ (পিলু, খেমটা), ‘দীনের দিন কি এমনি যাবে আমি ভেবে মরি তাই’ (ঝিঁঝিট, ঠুমরী), ‘বিলাসেতে কর্মযোগ পেয়ে পূর্ণ অধিকার’ (কালাংড়া, কাওয়ালী ঠেকা), হরিনামে মন মজায়ে দয়াময়ের পূর্ণ ছবি’ (কাফি, একতাল) ইত্যাদি। বাণীর শুরু এবং রাগ ও তালের নাম চিহ্নিত করায় গানগুলো অন্যান্য আশ্রমভিত্তিক গান থেকে নিঃসন্দেহে স্বাতন্ত্রের দাবীদার। এই দুরূহ কাজটি করেছেন মহর্ষির অন্যতম শিষ্য সঙ্গীত গুণাকর ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁসাহেব। তার আরেক পরিচয় তিনি ছিলেন সুরসম্রাট আলাউদ্দীন খাঁসাহেবের অগ্রজ।

একটা বিভ্রান্তি দীর্ঘদিন ছেয়ে আছে ‘মলয়া’ গান নিয়ে। কোনো কোনো গবেষক মনে করতেন যে মলয়া গান বোধ হয় মনোমোহন-লব পাল-আফতাবউদ্দিন খাঁসাহেবের যৌথ সৃষ্টি। তাদের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে বুঝি ‘মলয়া’র সৃষ্টি। কিন্তু তারা ‘মলয়া’ এবং ‘মলআ’র সাধারণ সরল পার্থক্যটুকু কেন ধরতে পারলেন না– এটি এক ঘোরলাগা বিস্ময়। মহর্ষি মনোমোহন ‘মলয়া’ শব্দটি নিয়েছেন ‘মলয়’ থেকে। তার রচিত বাণীগুলো সৃষ্টি হয়েছে ধ্যান ও আরাধনার এক গভীর স্তর থেকে। মলয় শব্দের অভিধানগত অর্থ ‘স্নিগ্ধ দখিনা পবন।’ তার গানের সুর ও বাণী ভক্তের হৃদয়ে সত্যি দখিন হাওয়ার পরশ আনে। বাংলা সাহিত্যের অমর দুই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামও ‘দখিনা পবন’ নিয়ে গান রচনা করেছেন।

সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার, জাতপাতের গোঁড়ামী, ধর্মীয় মৌলবাদের অনেক ঊর্ধ্বে ছিলেন তিনি। তার রচনা বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের এক অনিবার্য সম্পদ। তিনি আমাদের মহামিলনের এক বাতিঘর; এক সাংস্কৃতিক হৃদপিণ্ড। নজরুলেরও আগে হিন্দু-মুসলমান মিলনের জন্যে তিনি জয়গান অনন্ত গেয়েছেন। তাই তার রচনা মৌলিক জ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। এমন একজন মহাপুরুষ জন্মেছিলেন এই বাংলায়। এ আমাদের গর্ব।

রফিক সুলায়মান: লেখক ও শিল্প-সমালোচক।  

ঢাকা এক্সপ্রেস/আরইউ

আরও পড়ুন