শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:১৮, ১৭ জুন ২০২৫
এই ফিচারে আমরা এক নজরে দেখে নেব সেই ইরানকে—যার পরিচয় সাহাবি সালমান ফারসি (রা.)-এর মতো দীপ্তিমান চরিত্র থেকে শুরু করে রুমি-হাফেজ-সাদি পর্যন্ত বিস্তৃত।
হযরত ওমর ইবন খাত্তাব (রা.)-এর খেলাফতকালে ইসলামী সেনারা পারস্য সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে এক ঐতিহাসিক মোড় এনে দেন ইসলামের সম্প্রসারণে। শক্তিশালী ও সুসংগঠিত এই সাম্রাজ্যের পতনের পর বহু ইরানি স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু এখানেই তারা থেমে থাকেননি—বরং তারা পরিণত হন জ্ঞানের পথিকৃত ও সংস্কৃতির ধারক হিসেবে।
পারস্যভূমি ইসলামের আলোয় প্রথম উদ্ভাসিত হয় মহান সাহাবি সালমান আল-ফারসি (রা.)-এর মাধ্যমে। সত্য ধর্মের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে তিনি এসে পৌঁছান রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্যে। খন্দকের যুদ্ধে তাঁর দেওয়া কৌশলই মুসলিমদের বিজয়ে পরিণত হয় এবং ইসলামী যুদ্ধনীতি পায় এক নতুন দিকনির্দেশনা।
ইসলামী জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে ইরানিদের অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। ইমাম বোখারি (উজবেকিস্তানের বুখারা), ইমাম মুসলিম (ইরানের নিশাপুর), ইমাম গায্জালি (তুস), ইমাম তিরমিজি (তুর্কমেনিস্তানের তিরমিজ)—এসব মহান মুহাদ্দিস ও চিন্তাবিদরা পারস্য অঞ্চলেরই উত্তরসূরি। তাঁরা হাদিস সংকলন, ফিকহ ও দর্শনের এমন ভিত্তি স্থাপন করেন, যা আজও মুসলিম উম্মাহর জ্ঞানের মেরুদণ্ড।
ইরান আজ শুধু শিয়া মতাবলম্বী দেশ নয়—বরং এটি হয়ে উঠেছে আহলে বাইতের প্রেম ও শ্রদ্ধার কেন্দ্রস্থল। অনেক ইমাম, বংশধর ও তাঁদের অনুসারী পারস্যে আশ্রয় নেন বা শহীদ হন। তাঁদের কবর, মাজার ও স্মৃতিচিহ্নগুলো আজ ইরানের ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ইরান বরাবরই ইসলামী স্থাপত্য ও ক্যালিগ্রাফির ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে অনন্যতা বজায় রেখেছে। ইসফাহানের শাহ মসজিদ, শিরাজের পিঙ্ক মসজিদ, এবং মাশহাদের ইমাম রেজা কমপ্লেক্স শুধু ইবাদতের স্থান নয়—এগুলো হয়ে উঠেছে ধর্মীয় নান্দনিকতার জীবন্ত প্রতীক।
ইরান হলো ইসলামি কবিতা ও সুফিবাদের প্রাণকেন্দ্র। রুমি, হাফেজ, সাদি ও ওমর খৈয়ামের মতো কবিরা ধর্মীয় প্রেম, আত্মদর্শন ও আল্লাহর মহব্বতের যে বাণী ছড়িয়েছেন, তা আজও বিশ্বজুড়ে পাঠক-শ্রোতাদের হৃদয়ে দোলা দেয়। ফারসি সাহিত্য আজও ইসলামী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গর্ব।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়—বরং এটি ছিল আধুনিক যুগে ইসলামের পক্ষ থেকে এক মৌলিক আত্মঘোষণা। আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইরান হয়ে ওঠে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র, যা পশ্চিমা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আত্মনির্ভর মুসলিম পরিচয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
ইরান বা পারস্য শুধু একটি ভৌগোলিক নাম নয়—এটি ইসলামি সভ্যতা, জ্ঞানচর্চা, সাহসিকতা ও আধ্যাত্মিকতার এক নিরবিচ্ছিন্ন স্রোতধারা। সালমান ফারসি (রা.)-এর প্রথম পদচারণা থেকে শুরু করে রুমির আত্মদর্শন ও খোমেনির বিপ্লব—সব মিলিয়ে ইরান আজও মুসলিম জগতের এক চিরভাসমান আলো।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ