শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:৩৭, ১১ আগস্ট ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফলে এই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের ফল সোমবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম।
রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তায় পরিবর্তন
জরিপে দেখা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দেবেন ১২ শতাংশ, জামায়াতে ইসলামীকে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ। গত অক্টোবরে বিএনপির সমর্থন ছিল ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ, জামায়াতের ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এনসিপির ২ শতাংশ। অর্থাৎ বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন কিছুটা কমেছে, আর এনসিপির সমর্থন সামান্য বেড়েছে।
গত অক্টোবরে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশে। জাতীয় পার্টির সমর্থন শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশে, আর অন্যান্য ইসলামি দলের সমর্থন ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে নেমে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তবে নিজের এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে বলে মনে করেন—এই প্রশ্নে ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপির, ১৩ শতাংশ জামায়াতের, ১ শতাংশ এনসিপির এবং ৭ শতাংশ আওয়ামী লীগের কথা উল্লেখ করেছেন।
জরিপের পদ্ধতি ও তথ্য
বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ জানান, জরিপের জন্য ৫ হাজার ৪৮৯ জনের মতামত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারী; ৭৩ শতাংশ গ্রাম ও ২৭ শতাংশ শহরের বাসিন্দা। ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত টেলিফোনে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, চলমান সমস্যা ও সংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে করা জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় পালস সার্ভের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ধারণা
দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে বলে মনে করেন ৪২ শতাংশ, অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে মনে করেন ৪৫ শতাংশ মানুষ। গত অক্টোবরে রাজনৈতিক সঠিক পথের পক্ষে মত দিয়েছিলেন ৫৬ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক সঠিক পথের পক্ষে ৪৩ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদ সামান্য বেড়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ কমেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে ১০০-এর মধ্যে গড়পড়তা ৬৩ নম্বর দিয়েছেন উত্তরদাতারা, যা গত অক্টোবরে ছিল ৬৮।
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে মতামত
ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন চান ৫১ শতাংশ মানুষ। কিছু জরুরি সংস্কারের পর নির্বাচন চান ১৭ শতাংশ। সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন চান ১৪ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশের সংস্কার বিষয়ে কোনো ধারণা নেই।
প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে একাধিক উত্তর দেওয়ার সুযোগে ৩০ শতাংশ বলেছেন আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, ১৬ শতাংশ আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন, ১১ শতাংশ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ১৬ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসা চাঙা করা, ১৩ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো, ১০ শতাংশ বেকারত্ব হ্রাস এবং ১৭ শতাংশ দুর্নীতি দমন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহনশীলতা কমানো এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ১৯ শতাংশ করে উত্তরদাতা।
নির্বাচন কবে চান ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা
৩২ শতাংশ মানুষ ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চান, ১২ শতাংশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে, ১১ শতাংশ জুনের মধ্যে এবং ২৫ শতাংশ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর বা পরে নির্বাচন চান।
৭০ শতাংশ মানুষ মনে করেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। ১৫ শতাংশ মনে করেন সুষ্ঠু হবে না, আর ১৪ শতাংশ এ বিষয়ে নিশ্চিত নন।
জরিপের ফল প্রকাশের পর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। আলোচনা সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক এ কে এম ফাহিম মাশরুর। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আলোচকেরা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ইউকে