শিরোনাম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৪৮, ১৩ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় খুঁজে পাওয়া একটি চোয়ালের হাড় থেকেই এই আবিষ্কারের সূচনা। তবে আধুনিক স্ক্যানিং প্রযুক্তির কল্যাণে গবেষকেরা এখন নিশ্চিত হয়েছেন, এটি একটি একেবারে নতুন প্রজাতির টেরোসর।
ওয়াশিংটন ডিসির ‘স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় এই সরীসৃপটির নাম রাখা হয়েছে ‘ইওটেফ্রাড্যাকটিলাস ম্যাকইনটায়রি’, যার অর্থ— ‘ছাই ডানাওয়ালা ভোরের দেবী’।
নামকরণে ব্যবহৃত ‘ছাই’ শব্দটি এসেছে ঐতিহাসিক এক নদীর তলদেশে আগ্নেয় ছাইয়ের স্তর থেকে, যেখানে হাড়গুলো সংরক্ষিত ছিল বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক খ্যাতনামা জার্নাল Proceedings of the National Academy of Sciences-এ।
প্রায় ২০ কোটি ৯০ লাখ বছর আগের এই টেরোসরটিকে উত্তর আমেরিকায় এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন টেরোসর হিসেবে বিবেচনা করছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষক বেন ক্লিগম্যান বলেন, ট্রায়াসিক যুগের টেরোসরের হাড়গুলো সাধারণত ছোট, পাতলা এবং ফাঁপা হয়ে থাকে। ফলে এগুলো জীবাশ্মে পরিণত হওয়ার আগেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আবিষ্কারের স্থানটি ‘পেট্রিফাইড ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক’-এর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে পাথরের মরুভূমির মতো একটি অঞ্চলজুড়ে রয়েছে বহু প্রাচীন জীবাশ্ম স্তর।
প্রায় ২০ কোটিরও বেশি বছর আগে অঞ্চলটি ছিল এক নদীর তলদেশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার বালু ও মাটির স্তর জমে সংরক্ষিত করে রেখেছে হাড়, আঁশসহ বহু প্রাণীর জীবাশ্ম।
সেই নদীটি তৎকালীন প্যানজিয়া মহাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছিল— যে সময় পৃথিবীর সব স্থলভাগ একত্রে সংযুক্ত ছিল একটি একক সুপারকন্টিনেন্ট হিসেবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, টেরোসরের চোয়াল ছাড়াও ওই এলাকায় পাওয়া গেছে আরো অনেক হাড়, দাঁত, মাছের আঁশ ও জীবাশ্মিত মল (কোপ্রোলাইট)।
গবেষণা দলের মতে, টেরোসরের হাড়ের উপস্থিতি এই ইঙ্গিত দেয় যে, পৃথিবীর আরো বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রায়াসিক যুগের পলি স্তরে এমন আরো টেরোসর জীবাশ্ম থাকতে পারে।
এদের দাঁত বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সামুদ্রিক মাছের আকারের এই উড়ুক্কু সরীসৃপ শক্ত খোলসযুক্ত প্রাণী খেত।
গবেষক বেন ক্লিগম্যান বলেন, দাঁতের ডগায় অস্বাভাবিক ক্ষয়ের চিহ্ন স্পষ্ট, যা ইঙ্গিত দেয় তারা শক্ত আবরণযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করত।
এই আবিষ্কারের স্থানটি জীববৈচিত্র্যের এক মূল্যবান নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখানে এক সময়ে বিলুপ্ত হওয়া বিশাল উভচর প্রাণী, প্রাচীন খোলসওয়ালা কুমিরের আত্মীয় এবং আমাদের পরিচিত ব্যাঙ ও কচ্ছপ একসঙ্গে বসবাস করত।
গবেষক ক্লিগম্যান বলেন, এই জীবাশ্ম স্তরটি প্রায় ২০ কোটি বছর আগের এক বিবর্তনীয় রূপান্তরের প্রমাণ বহন করে।
তিনি আরো যোগ করেন, এ ধরনের আবিষ্কার আমাদের স্পষ্ট করে জানায় যে, প্রাগৈতিহাসিক এসব প্রাণী একক পরিবেশে একে অপরের পাশে বসবাস করত।
ঢাকা এক্সপ্রেস/এফএন/আরইউ