শিরোনাম
তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:৫১, ২৯ মে ২০২৫
সম্প্রতি ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি অনেক আগেই টিম কুককে বলেছি—যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া প্রতিটি আইফোন যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি হতে হবে। তা না হলে অ্যাপলকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’
ট্রাম্পের এমন হুঁশিয়ারি নতুন নয়। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসকে একই প্রশ্ন করেছিলেন—"আইফোন কেন আমেরিকায় তৈরি হয় না?"
সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, অ্যাপল যে ধরনের জটিল ও দক্ষতানির্ভর উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে, সেটি পুরোপুরি আমেরিকায় বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে আইফোন তৈরির জন্য প্রয়োজন বিশাল শ্রমশক্তি, উচ্চমাত্রার কারিগরি দক্ষতা এবং বিশেষায়িত প্রযুক্তি—যেগুলোর প্রধান ভিত্তি এখন চীন ও ভারত।
ফরেস্টার রিসার্চের বিশ্লেষক দীপাঞ্জন চ্যাটার্জি বলেন, “এই পুরো ব্যবস্থাপনা আমূল বদলাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবতায় এটি কার্যকর হবে না।”
আইফোন উৎপাদনের বড় অংশ করে ফক্সকন, যারা চীনে কয়েক লাখ শ্রমিক নিয়ে বিশাল কারখানা চালায়। সেখানে শ্রমিকেরা ডরমিটরিতে থাকেন, যা দ্রুত উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক। যুক্তরাষ্ট্রে এমন স্কেলে শ্রমিক পাওয়া বা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব।
এছাড়া, ১৯৭০ সালে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ শতাংশ নাগরিক উৎপাদন খাতে কাজ করতেন, বর্তমানে তা কমে এসেছে মাত্র ৮ শতাংশে। উৎপাদন এখন কেবল ম্যানুয়াল লেবার নয়, বরং ডেটা অ্যানালিটিক্স ও সফটওয়্যার-নির্ভর সিস্টেমে পরিণত হয়েছে।
২০১৭ সালে অ্যাপল সিইও টিম কুক বলেছিলেন, “চীনে এমন একটি দক্ষতা ও প্রযুক্তির মিশ্রণ রয়েছে—যা আইফোনের মতো নিখুঁত পণ্যের জন্য অপরিহার্য।” যদিও অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, তবে সেটি মূলত গবেষণা, সফটওয়্যার, সার্ভার এবং স্মার্ট উৎপাদন শেখানোর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য—আইফোন তৈরির কারখানার জন্য নয়।
বিশ্লেষক প্যাট্রিক মোরহেড মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরে কিছু অংশ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে আনা সম্ভব, তবে তার জন্য ব্যাপক অটোমেশন এবং আইফোনের ডিজাইনেও পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক ড্যান আইভস বলছেন, “আইফোনের উৎপাদনের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যে ভারতে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে এখনো ৪০-৫০% উৎপাদন চীনে হচ্ছে। আর পুরো উৎপাদন যদি যুক্তরাষ্ট্রে আনতে হয়, খরচ তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।”
একদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক চাপ—অন্যদিকে অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বৈশ্বিক চেইনের নির্ভরতা। অ্যাপলের সামনে এখন কৌশলের দড়ির ওপর ভারসাম্য রেখে চলার সময়।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এমআরএইচ