ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ মুহররম ১৪৪৭

এমআইটি গবেষণায় সতর্কবার্তা

চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে কমে যাচ্ছে চিন্তাশক্তি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৩:১২, ১৩ জুলাই ২০২৫

চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে কমে যাচ্ছে চিন্তাশক্তি

প্রতীকী ছবি

চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট মানুষের চিন্তার ক্ষমতা হ্রাস করছে— এমনটিই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (MIT) একটি সাম্প্রতিক গবেষণা।

গবেষকরা বলছেন, চ্যাটজিপিটির উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা মানুষের মস্তিষ্কের সক্রিয়তাকে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় করে তুলছে। ফলাফল হিসেবে কমছে শেখার আগ্রহ, মনোযোগ ও বিশ্লেষণী দক্ষতা।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের নভেম্বরে উন্মোচিত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। মাইক্রোসফটের এআই সহযোগিতায় তৈরি এই প্রযুক্তি অল্প সময়েই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে মানুষ নানা প্রশ্নের উত্তর, কবিতা, রেসিপি, অ্যাসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পরামর্শও পাচ্ছেন মুহূর্তেই। এই অতিনির্ভরতা নিয়েই এখন উদ্বিগ্ন গবেষকরা।

এমআইটি-এর গবেষকরা চার মাস ধরে ৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর গবেষণা চালান। তাদের তিনটি দলে ভাগ করে প্রবন্ধ লেখার কাজ দেওয়া হয়— এক দল শুধু নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে, আরেক দল সার্চ ইঞ্জিন এবং তৃতীয় দল ব্যবহার করে চ্যাটজিপিটি।

এই প্রবন্ধ লেখার সময় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে যে তড়িৎ সংকেত তৈরি হচ্ছিল, তা পর্যালোচনা করেন গবেষকরা। পাশাপাশি ভাষার গঠন ও প্রবন্ধের মান বিশ্লেষণ করে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক সক্রিয়তার মাত্রাও মাপেন।

ফলাফলে দেখা যায়, যারা এআই টুল ব্যবহার করে লেখেন, তাদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা ছিল অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। শুধু তাই নয়, তারা নিজেদের লেখা মনে রাখতে পারেননি, এমনকি লেখার প্রতি যুক্ততার অনুভবও কম ছিল।

পরবর্তী ধাপে অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা বদলে দেওয়া হয়। যারা শুরুতে শুধু চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছিলেন, এবার তাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি দিয়ে প্রবন্ধ লিখতে বলা হয়। কিন্তু দেখা যায়, তারা আগের মতো পারফর্ম করতে পারেননি।

গবেষকেরা সতর্ক করে বলেন, এ চতুর্থ ধাপে অংশগ্রহণকারী সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ জন, তাই এই ফলাফলকে প্রাথমিক বলা যায়। তবে বিষয়টি আরও গবেষণার দাবি রাখে।

তবে কি চ্যাটজিপিটি আমাদের ধীরে ধীরে বুদ্ধিহীন করে দিচ্ছে? গবেষকরা এখনই নিশ্চিত কিছু বলছেন না, তবে তারা মত দিয়েছেন— অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষের মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যেমনটি হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সময়। তখনো মানুষ হাতে গোনা বাদ দিয়ে যন্ত্রের ওপর নির্ভর করেছিল, কিন্তু সে অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থায় কঠোরতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং সমান্তরালে মানবিক চিন্তাশক্তি ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

চ্যাটজিপিটি আমাদের জীবনে আশীর্বাদ— এ কথা যেমন সত্য, তেমনি তা যেন অভিশাপে পরিণত না হয়, সেদিকেও নজর রাখা জরুরি।

ঢাকা এক্সপ্রেস/এফএন/আরইউ

আরও পড়ুন