শিরোনাম
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:৩৪, ১২ জুলাই ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
কী এই ক্যালিসথেনিক্স?
ক্যালিসথেনিক্স এমন এক্সারসাইজ পদ্ধতি, যেখানে কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই শরীরের ওজন ব্যবহার করে ব্যায়াম করা হয়। এটি শুরু করা সহজ, কম খরচে করা যায়, এবং এর জন্য প্রয়োজন হয় না কোনো নির্দিষ্ট জিম বা ফিটনেস সেন্টারের।
এই পদ্ধতিতে সাধারণত যেসব ব্যায়াম করা হয় তা হলো:
* পুশ-আপ
* বডিওয়েট স্কোয়াট
* চিন-আপ
* বার্পি
* বডিওয়েট লাঞ্জ
উন্নত পর্যায়ে এই তালিকায় যোগ হয় আরও চ্যালেঞ্জিং ব্যায়াম যেমন মাসল-আপ, যেখানে একজন নিজেকে একটি বারের উপর টেনে তোলে; অথবা ফ্ল্যাগপোল হোল্ড, যেখানে শরীরকে একটি খুঁটির সঙ্গে অনুভূমিকভাবে ধরে রাখা হয়।
এই ব্যায়ামগুলো সাধারণত অনেক রিপিটিশনের (repetitions) মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা একে একযোগে স্ট্রেংথ ট্রেনিং ও কার্ডিও প্রশিক্ষণ হিসেবে কার্যকর করে তোলে। এর বিপরীতে, জিমে সাধারণত ওজন তুলে অল্প রিপের মাধ্যমে পেশি গঠন করা হয়।
ক্যালিসথেনিক্সের উৎপত্তি ও ইতিহাস
এই পদ্ধতির উৎপত্তি প্রাচীন গ্রিসে, যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের শরীরচর্চায় এই ধরণের বডিওয়েট এক্সারসাইজের ব্যবহার ছিল।
অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে, ‘ক্যালিসথেনিক্স’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘kallos’ (সৌন্দর্য) এবং ‘sthenos’ (শক্তি) থেকে। ১৮০০ সালের শুরুর দিক থেকেই এটি আধুনিক ফিটনেস জগতে পরিচিত হয়ে ওঠে।
আধুনিক সময়ে ক্যালিসথেনিক্সের ব্যবহার
বর্তমানে ক্যালিসথেনিক্সকে প্রায়ই HIIT (High Intensity Interval Training) রুটিনের অংশ হিসেবে দেখা যায়। এতে লাফানো, স্কিপিং বা বার্পি ধরনের কার্ডিও ব্যায়ামের সঙ্গে পুশ-আপ, স্কোয়াট বা অন্যান্য বডিওয়েট ব্যায়ামের সংমিশ্রণ করা হয়।
শিশুরা যখন পার্কে দোলনা, মাঙ্কি বার বা খেলার যন্ত্রে ঝাঁপিয়ে খেলে, সেখানেও তারা নিজের অজান্তেই ক্যালিসথেনিক্স করছে।
ক্যালিসথেনিক্সের উপকারিতা
এই এক্সারসাইজ কতটা উপকারি হবে, তা নির্ভর করে আপনি কতটা নিয়মিতভাবে ও মনোযোগ দিয়ে এটি করছেন তার ওপর।
গবেষণা বলছে, যখন রেসিস্ট্যান্স ট্রেনিং (যেমন: ওজন তোলা বা বডিওয়েট ব্যায়াম) এবং এরোবিক ব্যায়াম একত্রে করা হয়, তখন তা স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও মৃত্যুঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ক্যালিসথেনিক্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি কম সময়ে, কম খরচে, যেকোনো জায়গা থেকে শুরু করা যায়। নিয়মিত করলে শরীরের গঠন উন্নত হয়, পেশির শক্তি বাড়ে এবং শারীরিক ভঙ্গিও (posture) উন্নত হয়।
একাধিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্যালিসথেনিক্স পাইলাটিসের তুলনায় ভালোভাবে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ ও চর্বি হ্রাসে কার্যকর। সকার খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এটি শরীরের চর্বি কমিয়ে লিন মাসল বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে, এই উপকারিতাগুলো অন্যান্য এক্সারসাইজ পদ্ধতির তুলনায় কতটা কার্যকর—সে বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি তুলনামূলক গবেষণা এখনও সীমিত।
কিছু সীমাবদ্ধতা
যারা বড় আকারের পেশি গড়তে চান, তাদের জন্য শুধুমাত্র ক্যালিসথেনিক্স যথেষ্ট নাও হতে পারে। কারণ, এখানে ধাপে ধাপে ভার বাড়ানোর সুযোগ সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, জিমে আপনি ডাম্বেল প্রতি সপ্তাহে ১ কেজি করে বাড়াতে পারেন। কিন্তু ক্যালিসথেনিক্সে এক লেভেল থেকে আরেক লেভেলে যাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন।
আরও একটি সীমাবদ্ধতা হলো-শুধু বডিওয়েট ব্যবহার করে করা রেসিস্ট্যান্স ট্রেনিং ফ্লেক্সিবিলিটি বা শরীরের গতিসীমা (range of motion) খুব একটা বাড়ায় না। যেটা স্ট্রেচিং বা জিমে মেশিন ব্যবহারে অর্জন করা সম্ভব।
ক্যালিসথেনিক্স কি আপনার জন্য উপযুক্ত?
এটা নির্ভর করে আপনি কী চান তার ওপর। যদি লক্ষ্য হয় অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়া, তবে ভারোত্তোলনই উপযুক্ত। যদি লক্ষ্য হয় পেশি বৃদ্ধি, তবে এমন ওজন তুলুন যাতে ক্লান্তি আসার আগেই থামতে হয়। যদি লক্ষ্য হয় চর্বি কমানো ও লিন ফিজিক তৈরি করা, তবে প্রথমে মনোযোগ দিন সঠিক পুষ্টি গ্রহণে; এরপর নির্বাচন করুন কার্ডিও বা ওজন প্রশিক্ষণ।
আর যদি আপনি সময়ের অভাবে জিমে যেতে না পারেন, বা বাড়তি যন্ত্রপাতির ব্যবহার না করতে চান—তাহলে ক্যালিসথেনিক্স হতে পারে একটি চমৎকার সমাধান, যা একসঙ্গে কিছুটা কার্ডিও ও কিছুটা শক্তি প্রশিক্ষণ দেয়।
পার্কে, ছাদে, বা ট্র্যাভেল করার সময় হোটেল রুম বা ব্যালকনিতেও এই ব্যায়াম করা যায়।
সব ধরনের ব্যায়ামের মতো, ক্যালিসথেনিক্সেরও আছে কিছু উপকারিতা এবং কিছু সীমাবদ্ধতা। তবে একটি পরিপূর্ণ ফিটনেস রুটিনের অংশ হিসেবে এটি হতে পারে অত্যন্ত কার্যকর এবং সবার জন্য সহজলভ্য একটি পন্থা।
ঢাকা এক্সপ্রেস/এফএন/আরইউ